সোমবার ১৩ মে ২০২৪
Online Edition

ইমপিচমেন্ট কীভাবে করা হয়?

২৫ আগস্ট, বিবিসি : সংবাদ মাধ্যমে বর্তমানে গুরুত্বপূর্ণ যতো খবরাখবর প্রচারিত হচ্ছে তার একটি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে কেন্দ্র করে। তার টিমেরই সাবেক দু’জন সদস্য আইন ভঙ্গ করার কারণে বড রকমের সমস্যায পডেেছন। তাদের মধ্যে একজন মি ট্রাম্পের সাবেক আইনজীবী মাইকেল কোহেন।

কোহেন এখন তারই সাবেক বসের বিরুদ্ধে ঘুরে দাঁড়িয়েছেন। ট্রাম্পের বিরুদ্ধে তিনি অভিযোগ করেছেন যে নির্বাচনে অর্থ খরচ করার বিষযে যেসব আইন আছে ট্রাম্প তা ভঙ্গ করেছেন।

অভিযোগ অস্বীকার করে ট্রাম্প বলেছেন, কোহেন এখন ‘গল্প’ বানাচ্ছেন।

সর্বশেষ এই কেলেঙ্কারির ঘটনায প্রশ্ন উঠেছে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ভবিষ্যৎ নিয়ে। বলা হচ্ছে, শেষ পর্যন্ত কি তাকে সংসদীয় বিচারের মাধ্যমে প্রেসিডেন্টের পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া বা ইমপিচ করা হতে পারে?

কিন্তু এই ইমপিচমেন্ট বা অভিশংসনের অর্থ কী আর প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বেলায এর সম্ভাবনা কতোটুকু?

ইমপিচমেন্ট কি?যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে ইমপিচমেন্ট বা অভিশংসনের ঘটনা বিরল। এর মাধ্যমে প্রেসিডেন্টের ক্ষমতায় ভারসাম্য রক্ষা করা হয়।

যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেস, যেখানে আইন তৈরি করা হয, তারা দেশটির প্রেসিডেন্টসহ শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তাদেরকে বিচারের মুখোমুখি করতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানে বলা আছে, বেশ কিছু অপরাধের জন্যে প্রেসিডেন্টকেও তার পদ থেকে সরিযে দেওয়া অর্থাৎ তাকে ইমপিচ করা যেতে পারে।

এসব অপরাধের মধ্যে রযেেছ: ‘রাষ্ট্রদ্রোহিতা, ঘুষ নেওয়া অথবা অন্য কোন বড ধরনের কিম্বা লঘু অপরাধ।’

ইমপিচ কিভাবে করা হয়?

ইমপিচমেন্টের প্রক্রিয়া শুরু হতে হবে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি পরিষদ বা হাউজ অব রিপ্রেজেনটেটিভস থেকে। এটি মার্কিন কংগ্রেসের একটি অংশ।

এই প্রক্রিযা শুরু করার জন্যে এটি সেখানে সাধারণ সংখ্যাগরিষ্ঠতায পাস হতে হবে। আর সেটা পাস হলে পরের ধাপে বিচার অনুষ্ঠিত হবে সেনেটে, যেটা কংগ্রেসের দ্বিতীয় অংশ।

এটা অনেকটা আদালত কক্ষের মতো, যেখানে সেনেটররা বিচারক বা জুরি হিসেবে কাজ করবেন। তারাই সিদ্ধান্ত নেবেন প্রেসিডেন্ট দোষী কি নির্দোষ।

প্রেসিডেন্টকে তার পদ থেকে সরিযে দিতে হলে এই সেনেটে দুই-তৃতীয়াংশ সেনেটরকে ইমপিচমেন্টের পক্ষে ভোট দিতে হবে।

এরকম কী আগে হয়েছে?

সর্বশেষ যে প্রেসিডেন্টকে ইমপিচ করার উদ্যোগ নেওয়া হযিেছল তিনি বিল ক্লিনটন। সেটা ১৯৯৮ সালের ঘটনা। ক্লিনটনের বিরুদ্ধে ইমপিচমেন্টের প্রক্রিযা শুরু করার জন্যে ভোট পড়েছিল প্রতিনিধি পরিষদে।

এর আগে এরকম ঘটনা ঘটেছিল ১৮৬৮ সালে। তৎকালীন প্রেসিডেন্ট এন্ড্রু জনসনের বিরুদ্ধেও ইমপিচমেন্টের প্রক্রিয়া শুরু হযিেছল।

কিন্তু ক্লিনটন কিম্বা জনসন তাদের কাউকেই সেনেটে দোষী সাব্যস্ত করা হয়নি। সুতরাং, ইমপিচমেন্টের অর্থ এটা নয যে এর প্রক্রিযা শুরু হলেই প্রেসিডেন্টকে তার পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হবে।

যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে এখনও পর্যন্ত কোন প্রেসিডেন্টকে ইমপিচমেন্টের কারণে প্রেসিডেন্টের পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়নি। তবে একজন প্রেসিডেন্টকে তার পদ থেকে সরিয়ে দেওয়ার উপক্রম হয়েছিল। তিনি রিচার্ড নিক্সন।

১৯৭৪ সালে তার বিরুদ্ধে ইমপিচমেন্টের প্রক্রিযা শুরু হওয়ার আগেই তিনি পদত্যাগ করেন। ধারণা করা হয়, প্রক্রিয়াটি শুরু হলে তাকে হয়তো প্রেসিডেন্টের পদ থেকে শেষ পর্যন্ত সরিয়ে দেওয়া হতো।

ডোনাল্ড ট্রাম্পকে কি ইমপিচ করা হতে পারে?

বর্তমানে এরকম কোন সম্ভাবনা নেই। হাউজ অফ রিপ্রেজেনটেটিভ ও সেনেটে ডোনাল্ড ট্রাম্পের রাজনৈতিক দল রিপাবলিকান পার্টির সদস্য সংখ্যা তাদের প্রতিদ্বন্দ¦ী দল ডেমোক্র্যাটির পার্টির সদস্য সংখ্যার চাইতেও বেশি।

ফলে প্রচুর রিপাবলিকানকে,আরো সুনির্দিষ্ট করে বলতে গেলে হাউজ অফ রিপ্রেজেনটেটিভে ২৫ জন রিপাবলিকান সদস্যকে এবং সেনেটে ১৭ জনকে তাদের নেতার বিরুদ্ধে ভোট দিতে হবে এই প্রক্রিযা শুরু করা এবং তাকে ইমপিচ করার জন্যে। (শুধু তাই নয, এই হিসেব তখনই সম্ভব হবে যখন, যারা রিপাবলিকান নয তাদের সবাইকেও ইমপিচ করার পক্ষে ভোট দিতে হবে।)

তবে যাই হোক, যুক্তরাষ্ট্রে গুরুত্বপূর্ণ একটি নির্বাচন আসছে। মধ্যবর্তী নির্বাচন। এবছরের শেষের দিকে। ওই নির্বাচনের ফলাফল হযতো বর্তমানের এই হিসেব নিকেশকে বদলে দিতে পারে।

আগামী নবেম্বর মাসে অনুষ্ঠেয় ওই নির্বাচনে যুক্তরাষ্ট্রের জনগণ কংগ্রেসের সদস্যদের নির্বাচন করবেন। হাউজ অফ রিপ্রেজেনটেটিভের সবকটি অর্থাৎ ৪৩৫টি আসনে এবং সেনেটের ১০০টি আসনের মধ্যে ৩৫টি আসনে হবে এই নির্বাচন।

নির্বাচনের ফলাফল কী হয় সেটা দেখতে হবে- হাউজ অফ রিপ্রেজেনটেটিভে সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারিয়ে ফেলতে পারে রিপাবলিকানরা। সিনেটেও এরকম ঘটতে পারে।

যদি এরকম কিছু হয় তাহলে ডেমোক্র্যাটরা হয়তো দেখতে পারেন যে কংগ্রেসের তাদের পর্যাপ্ত সংখ্যক সদস্য রয়েছে ইমপিচমেন্ট প্রক্রিয়া শুরু করার জন্যে, যদি তারা সেটি চায়।

ডোনাল্ড ট্রাম্পকে সরিয়ে দিলে কী হবে?

ট্রাম্পকে যদি শেষ পর্যন্ত ইমপিচ করা হয় তাহলে ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স যুক্তরাষ্ট্রের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করবেন।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ