বুধবার ২২ মে ২০২৪
Online Edition

সুন্দরবনে পশুর গাছের বিস্তারে চারা রোপণ করছে বনবিভাগ

খুলনা অফিস : সুন্দরবনে পশুর গাছের বিস্তার ঘটাতে রোপণ কর্মসূচি হাতে নিয়েছে বন বিভাগ। প্রাথমিক পর্যায়ে সুন্দরবনের পূর্ব এবং পশ্চিম বিভাগের প্রায় ৪০ হেক্টর জায়গা জুড়ে চারা রোপন করা হবে। সারা বছর ধরেই এ কর্মসূচি বাস্তবায়িত হবে। বন বিভাগ বলছে, পাইলট প্রকল্প হিসেব হাতে নেয়া এ প্রকল্প সফল হলে আরও বৃহৎ পরিসরে কর্মসূচি গ্রহণ করা হবে।
বন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, বিভিন্ন রোগের কারণে সুন্দরবনে গত ৩০ বছরে প্রায় ৪০ শতাংশ সুন্দরী ও পশুর গাছ বিলুপ্ত হয়েছে। এরমধ্যে কেওটপডাইং ও গলরোগের কারণে সুন্দরী এবং হাটরট ও ডাইব্যাক রোগের কারণে পশুর গাছ মারা যাচ্ছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ম্যানগ্রোভ বন সৃষ্টি হয়-এমন একটি বিশেষ প্রাকৃতিক পরিবেশে যেখানে লোনা ও মিষ্টি পানি প্রবাহের একটি নির্দিষ্ট মাত্রার সম্মিলন ঘটে। লোনা ও মিঠা পানির এই মাত্রার হেরফের ঘটলে ম্যানগ্রোভ বনের ক্ষতি হয়। যেকারণে সুন্দরী ও পশুর গাছ মারা যাচ্ছে। তাছাড়া প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে লম্বা সুন্দরী ও পশুর গাছ মারা যাওয়ায় নতুন করে এসব বৃক্ষ জন্ম নিচ্ছে না। অন্যদিকে বর্তমানে সুন্দরবনে গরান কাঠ আহরণ নিষিদ্ধ হওয়ায় এর বিস্তার ঘটেছে ব্যাপকহারে। যে কারনে অনেক সময় গরানের বেড়া (প্রাকৃতিকভাবে গড়ে ওঠা) ভেদ করে এসব গাছের বীজ অপেক্ষাকৃত উচু স্থানগুলোতে প্রবেশ করতে পারছে না। ফলে বংশবিস্তারও কমে যাওয়ার অন্যতম কারন।
এসব বিষয়গুলোকে সামনে নিয়ে বন অভ্যন্তরে এসব গাছের বিস্তারে কাজ করছে বনবিভাগ। সুন্দরবন পশ্চিম বিভাগের চারটি এবং পূর্ব বিভাগে চারটি স্থানে এ চারা রোপন করা হবে। এরমধ্যে সাতক্ষীরা রেঞ্জের কাছিকাটা ও কাটেশ্বর এবং খুলনা রেঞ্জের জালিয়া ও কাশিটানা এলাকায় চারা ও বীজ রোপন করা হবে। গত এক মাস ধরেই একাজ বাস্তবায়ন করছে বনবিভাগের কর্মকর্তারা।
খুলনার কাশিয়াবাদ ফরেস্ট স্টেশনের কর্মকর্তা সুলতান মাহমুদ টিটু বলেন, তিনভাবে এ কাজ বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। বনের অভ্যন্তরে যেসব জায়গা ফাঁকা রয়েছে সেসব স্থানে বীজ, অঙ্কুরিত বীজ এবং চারা রোপন করা হবে। এসব বীজ বন থেকেই সংগ্রহ করে রোপন করা হবে। এয়াড়াও স্টেশনের সন্নিকটে বীজতলা তৈরি করা হবে। পরবর্তিতে সেখান থেকে চারা তুলে বনের ভেতর রোপন করা হবে। ইতোমধ্যে কলাবগী, কোবাদক, কলাগাছিতে নার্সারী তৈরি করা হয়েছে।
সূত্রটি জানিয়েছে, এসব রোগের কারণগুলো হচ্ছে-মিষ্টি পানির প্রবাহ হ্রাস, লবণাক্ততা বৃদ্ধি, বনের অভ্যন্তরে নদ-নদীতে পলির আধিক্য, স্বাভাবিক জোয়ার-ভাটা বাধাগ্রস্ত, পুষ্টি সরবরাহ হ্রাস, গাছের ডগায় ও শেকড়ে কীটপতঙ্গ ও ছত্রাকের আক্রমণ, জলাবদ্ধতা এবং নানাবিধ প্রাকৃতিক পরিবর্তন।
এ কর্মসূচির বিষয়ে সুন্দরবন পশ্চিম বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. বশির আল মামুন বলেন, নানা কারণে পশুর, সুন্দরী, ধুন্দলসহ কয়েক প্রজাতির গাছ মারা যাচ্ছে। ফলে বনবিভাগের নিজস্ব উদ্যোগে এসব গাছ রোপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যার বাস্তবায়ন ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। এটিকে পাইলট প্রকল্প উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ কাজে প্রত্যাশা অনুযায়ী ফলাফল পাওয়া গেলে পর্যায়ক্রমে বৃহৎ আকারে কর্মসূচি গ্রহণ করা হবে। তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, ‘এসব চারা রোপন এবং পরিচর্যার কারণে সংশ্লিষ্ট এলাকাগুলোতে এসব গাছ বেড়ে উঠবে। ফলে পশুরসহ এসব গাছ আবার ব্যাপকভাবে বনে শোভা বৃদ্ধি করবে’।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ