রবিবার ১২ মে ২০২৪
Online Edition

বঙ ও বাঙ জাতি

মাহমুদ ইউসুফ : প্রাগৈতিহাসিককালে বাংলাদেশে বাঙ জাতি বাস করত। বাঙ জাতি এখানে গড়ে তোলে এক সমৃদ্ধশালী জনপদ। প্রাচীন বাকলা-চন্দ্রদ্বীপ তথা আজকের বরিশালই ছিলো তাদের মূল আস্তানা। তবে সোনারগাঁও, সমতট, হরিকেল, বরেন্দ্র, পুণ্ড্র, গৌড়, নবদ্বীপ, মুর্শিদাবাদ ছিলো বাঙ জাতির সীমারেখার আওতাভুক্ত।
নিষাদ, কিরাত, ভেড্ডি, মঙ্গোলীয়, আলপাইন প্রভৃতি জনকওমের আবির্ভাব পরবর্তীকালের ঘটনা। আর অস্ট্রিক মূলত বাঙ-দ্রাবিড়দের আর্যপ্রদত্ত হিংসাত্মক নাম। বাঙ-দ্রাবিড় আর্য আগ্রাসন ও উপনিবেশ প্রতিরোধ প্রতিবাদ করায় তাদের অসুর আখ্যা  দেয়। দুর্গাপূজার আবহ এবং মূর্তিবিন্যাসও এ কথার সাক্ষ্য দেয়। অসুর শব্দের লিপ্যান্তর ঘটে পরবর্তীকালে অস্ট্রিক হয়েছে।
বাঙ জাতি ছিলো এক সুসভ্য জাতিগোষ্ঠী। ছিলো অসাম্প্রদায়িক, উদার, মানবতাবাদী। বৈদিক আর্যদের মতো অসভ্য, বর্বর, লুণ্ঠক, আগ্রাসী, দানব ছিলো না। আর্য রাজা ইন্দ্র ছিলো বিশ্ব জঙ্গি। হানাদার আর্যরা উত্তর ভারতে দ্রাবিড়দের পদানত করে আজ থেকে তিন হাজার বছর আগে। উত্তর ভারত বা হিন্দুস্তানের আদি দ্রাবিড়রা তখন উপায়ন্তর না পেয়ে বাংলাদেশে পাড়ি জমায়।
বাঙ দ্রাবিড় মিলে এখানে একটি সম্মিলিত জাতিগোষ্ঠী গড়ে তোলে যাদের উত্তরসূরী বাঙালি জাতি। এই বাঙালিরাই একদা গড়ে তুলেছিল শৌয-বীর্যের গঙ্গারিডি রাষ্ট্র। এর হাজার বছর পর চতুর্দশ শতকে তারা সোনারগাঁওকেন্দ্রিক স্বাধীন সুলতানি আমল সৃষ্টি করে বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দেয়। বাঙ জাতি তথা বাঙালি মুসলিমরাই ঈসা খা, মুসা খা, সিরাজদৌলা, আগা বাকের, মজনু শাহ, বালকি শাহ, তিতুমীর, শরিয়ত উল্লাহদের নেতৃত্বে দিল্লি ও ব্রিটিশ বিরোধী আযাদি সংগ্রামে সংঘবদ্ধ হয়। এরাই ১৯৪৭ সনে ব্রিটিশ হটিয়ে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠা করে ও ১৯৭১ সনে স্বাধীন বাংলাদেশ কায়েম করে বাংলাদেশি জাতি পরিচয়ে গর্বিত হয়।
বাংলাদেশে প্রাচীন অধিবাসী বাঙ সম্প্রদায়। বাঙ জাতিই বাংলাদেশের আদিবাসী। আমাদের অস্তিত্ব ও রক্ত মিশে আছে বাঙ জাতির সাথে। বর্তমান বাংলাদেশি নাগরিকরা প্রাচীন বাঙ জাতির সিলসিলার সাথে সম্পৃক্ত। এখন প্রশ্ন হলো এই বাঙ জাতির জন্ম কোথা থেকে? উত্তর খুই সহজ। ইসলামের দ্বিতীয় নবি নুহ আ. এর প্রপৌত্র বঙ হলো বাঙ জাতির জনক। বঙের পিতা হিন্দ, হিন্দের পিতা হাম, হামের পিতা হযরত নুহ আ.। বঙ বাংলাদেশে মানববসতির গোড়াপত্তন করেন। তাই বঙ বাঙালি জাতির আদি পিতা।
হদিস :
১. আজিজুল হক বান্না : বরিশালে ইসলাম, ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ, প্রকাশ ১৯৯৪।
২. ড. মোহাম্মদ হাননান : বাঙালির ইতিহাস (প্রাচীন যুগ থেকে ১৯৭৪), আগামী প্রকাশনী, ৩৬ বাংলাবাজার ঢাকা-১১০০, প্রথম বর্ধিত সংস্করণ ফেব্রুয়ারি ২০১৪।
৩. সিরাজ উদদীন আহমেদ : বরিশাল বিভাগের ইতিহাস, ভাস্কর প্রকাশনী ঢাকা, দ্বিতীয় সংস্করণ, প্রকাশ জুলাই ২০০৩।
৪. আখতার ফারুক : বাংগালীর ইতিকথা, জুলকারনাইন পাবলিকেশন্স ঢাকা।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ