শনিবার ০৪ মে ২০২৪
Online Edition

পদ্মা সেতু রেললিংক ড্রয়িং নিয়ে সমস্যার সমাধান না হলে ব্যয় ও সময় বাড়তে পারে

মমিন বিশ্বাস, মুন্সিগঞ্জ থেকে : পদ্মা সেতুর মূল অংশের প্রায় ৯০ শতাংশের কাজ হয়েছে। তবে সেতুর দু’প্রান্তে নিচের অংশে (নির্ধারিত স্থান) রেললিংক সংযোগ স্থাপন কাজ বন্ধ রয়েছে। সেতু কর্তৃপক্ষের আপত্তির কারণে রেললিংকের ত্রুটিজনিত স্থানে কাজ বন্ধ রয়েছে।
সমস্যা সমাধানে সেতু কর্তৃপক্ষ বরাবর ‘বিশেষ ড্রয়িং’ জমা দিয়েছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। ‘বিশেষ ড্রয়িং’ অনুযায়ী কাজ শুরু হলে অতিরিক্ত সময় কিংবা ব্যয়ও বৃদ্ধি পাবে না। কিন্তু, এ ড্রয়িংয়ের বাইরে গেলে সময় ও ব্যয় বাড়বে। এছাড়া ‘পদ্মা সেতু চালুর দিনই ট্রেন চালানো হবে’- এমন প্রতিশ্রুতি রক্ষা করা চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
জানা গেছে, রেল লাইনের ভায়াডাক্টের অগ্রভাগ থেকে সড়কের উচ্চতা ৫ দশমিক ৭ মিটার এবং প্রস্থ ১৫ দশমিক ৫০ মিটার হওয়ার কথা। কিন্তু, সেই স্ট্যান্ডার্ড না মেনে উচ্চতা ও প্রস্থ কম রেখে কাজ শুরু করায় আপত্তি আসে। প্রায় ৪ মাস ধরে সেতুর দু’পাশে কাজ বন্ধ রয়েছে।
গত বৃহস্পতিবার সেতু কর্তৃপক্ষ বরাবর ‘বিশেষ ড্রয়িং’ জমা দিয়েছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। মঙ্গলবার এ নিয়ে সংশ্লিষ্ট উভয় পক্ষের মধ্যে বৈঠকও হয়েছে। ‘ত্রুটি’ দ্রুত সমাধানে একাধিকবার নকশা দেয়াসহ ত্রুটিপূর্ণ এলাকা পরিদর্শন করেছেন রেলপথমন্ত্রী, পরিকল্পনামন্ত্রীসহ ঊধ্বর্তন কর্মকর্তারা।
এ বিষয়ে রেলপথমন্ত্রী মো. নূরুল ইসলাম সুজন গণমাধ্যমকে জানান, মূল সেতুর দু’পাশে যে সমস্যা রয়েছে তা দ্রুততম সময়ের মধ্যে সমাধানে উভয়পক্ষই কাজ করছে। সেতু কর্তৃপক্ষের আপত্তির কারণে, সেতুর দু’পাশে রেল লাইন স্থাপন কাজ বন্ধ রয়েছে। করোনা ও বন্যার কারণে কাজে ধীরগতি ছিল। এখন এ সমস্যা দ্রুত সমাধান না হলে মূল সেতু দিয়ে একই দিন ট্রেন চালানোর প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে হিমশিম খেতে হবে।
তিনি বলেন, রেলের পক্ষ থেকে সর্বশেষ বিশেষ ড্রয়িং সেতু কর্তৃপক্ষ বরাবর পাঠানো হয়েছে। বিশেষ ড্রয়িং বুয়েটের প্যানেল সদস্যসহ সংশ্লিষ্টদের সমন্বয়ে করা হয়েছে। আশা করছি, এ ড্রয়িং গ্রহণ করে সেতু কর্তৃপক্ষ দ্রুততম সময়ের মধ্যে কাজ শুরু করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।
এদিকে মঙ্গলবার বিকালে পদ্মা সেতু প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক মো. শফিকুল ইসলাম জানান, রেলওয়ের পক্ষ থেকে সর্বশেষ একটি ‘বিশেষ ড্রয়িং’ আমরা পেয়েছি। আন্তর্জাতিক স্ট্যান্ডার্ড বজায় রেখে রেল লাইন স্থাপনের নির্দেশনা ছিল। সেই নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ না হওয়ায় তা বন্ধ রাখা হয়েছে। ড্রয়িংটি পর্যালোচনা করা হচ্ছে।
মঙ্গলবার উভয়পক্ষের (সেতু ও রেল) বৈঠক হয়েছে। এ সমস্যা দ্রুত সমাধানের মধ্য দিয়ে কিভাবে কাজ শুরু করা যায় তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। রেলওয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে- আরও কিছু সাপ্লিমেন্ট করা হবে। সব কিছু পরিপূরক হলে দ্রুত সমাধানের দিকে যাওয়া হবে। সর্বশেষ বিশেষ ড্রয়িং নিয়ে এ প্রকল্পের এক কর্মকর্তা জানান, এর আগে আরও পাঁচবার নকশা তৈরি করে সেতু কর্তৃপক্ষ বরাবর পাঠানো হলেও কোনোটারই উত্তর পাওয়া যায়নি।সেতু কর্তৃপক্ষ বলছে, সেতুর উভয় প্রান্তের সড়কে (মূল সেতু দিয়ে নামা-উঠা) ৫ দশমিক ৭ মিটার উচ্চতা এবং ১৫ দশমিক ৫ মিটার প্রস্থ রাখতে হবে। কিন্তু, রেলওয়ে বলছে, ২০১৫ সালের চূড়ান্ত সমীক্ষা অনুযায়ী তারা লাইন স্থাপন করেছিল। সমীক্ষায় ৫.৭ এবং ১৫.৫ মিটার উল্লেখ নেই। এরপরও তা পুনর্গঠন করে সেতুর চাহিদা অনুযায়ী কাজ সম্পূর্ণ করার পরিকল্পনা নিয়েছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ।
বিশেষ এ ড্রয়িং অনুযায়ী কাজ শুরু হলে অতিরিক্ত সময় কিংবা ব্যয়ও বৃদ্ধি পাবে না। কিন্তু, এ ড্রয়িংয়ের বাইরে কাজ করতে হলে স্থাপিত একাধিক পিলার ভাঙাসহ নির্মাণ কাজের সময় ও ব্যয়ও বাড়বে। বিশেষ ড্রয়িংয়ের শেষের দিকে বলা হয়- উল্লিখিত ড্রয়িং অনুযায়ী কাজ করা হলে কাজ পুষিয়ে নেয়া যাবে। একই সঙ্গে প্রতিশ্রুতিও বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে।
সোমবার রেলপথ সচিব মো. সেলিম রেজা জানান, সেতু ও রেললিংক স্থাপন প্রকল্প দুটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অগ্রাধিকার প্রকল্পগুলোর মধ্যে অন্যতম। রেলওয়ে অংশে ত্রুটি ধরা পড়ায় পদ্মা সেতুর আপত্তিতে সেতুর দুই প্রান্তে কাজ বন্ধ রয়েছে। রেলওয়ে পক্ষ থেকে বিশেষ ড্রয়িং দেয়া হয়েছে সেই ড্রয়িং অনুযায়ী কাজ সম্পূর্ণ হলে প্রকল্পে বিলম্বের কোনো প্রভাব পড়বে না।
রেলওয়ে মহাপরিচালক মো. শামছুজ্জামান জানান, আমরা এ প্রকল্প নিয়ে বেশ চ্যালেঞ্জিং পরিস্থিতিতে রয়েছি। সেতু কর্তৃপক্ষের সম্মতি পেলে রেল লিংক সংযোগ স্থাপন কাজ পুনরায় শুরু করব। করোনা ও বন্যা এবং আপত্তির ক্ষতি পুষিয়ে নিতে জনবল ও সরঞ্জাম বাড়ানোও জরুরি হয়ে পড়বে বলে তিনি জানান।
সর্বশেষ বিশেষ ড্রয়িংয়ে উল্লেখ করা হয়- জাজিরা প্রান্তে ৫.৫ মিটারের স্থালে ৫.৭ মিটার করে ড্রয়িং সম্পূর্ণ করা হয়েছে। বিশেষ পদ্ধতিত্বে-কাস্ট ইন সিটু থেকে প্রিস্ট্রেচ পোর্টাল ফ্রেম করে তা করা হবে বলে ড্রয়িংয়ে উপস্থাপনা করা হয়।
২৫ নম্বর পিলারে ৬.৪ মিটার উচ্চতা পাওয়া গেছে- এটাকে সেতু কর্তৃপক্ষের চাহিদা অনুযায়ী ৭ ইঞ্চি উচুঁ করে ড্রয়িং করা হয়েছে। অন্যদিকে ১৫ এবং ১৪ নম্বর পিলার নিয়ে যে ত্রুটির কথা বলা হচ্ছে তা সঠিক নয়। সেতুর বিদ্যমান রাস্তার প্রস্থ ১০.০৮ মিটার (জাজিরা প্রান্ত) এবং ৯.০৭ মিটার প্রস্থ (মাওয়া প্রান্ত) রয়েছে। বিশেষ ড্রয়িংয়ের ৬টি পয়েন্টের মধ্যে বি-৩ এবং এ-৩ পয়েন্টে বলা হয়েছে, বিশেষ ড্রয়িং অনুযায়ী কাজ সম্পূর্ণ হলে রাস্তার দু’পাশে ১৫.৫ মিটার প্রস্থ এবং ৫.৭ মিটার উচ্চতা পাওয়া যাবে। এতে সেতু কর্তৃপক্ষের চাহিদা যথাযথ পূরণ হবে।
বিশেষ ড্রয়িংয়ে আরও বলা হয়, সেতুর দু’প্রান্তে ২৪, ২৫, ১৫ ও ১৪ নম্বর পিলার সম্পূর্ণ স্থাপন হয়নি। বিশেষ এ ড্রয়িং গ্রহণ করা হলে দ্রুত সময়ের মধ্যেই কাজ শুরু করা যাবে। বিশেষ এ ড্রয়িং অনুযায়ী কাজ শুরু হলে অতিরিক্ত সময় কিংবা ব্যয়ও বৃদ্ধি পাবে না। কিন্তু, এ ড্রয়িংয়ের বাইরে কাজ করতে হলে স্থাপিত একাধিক পিলার ভাঙাসহ নির্মাণ কাজের সময় এবং ব্যয়ও বাড়বে।
বিশেষ ড্রয়িংপত্রের শেষের দিকে বলা হয়েছে- উল্লিখিত ড্রয়িং অনুযায়ী কাজ করা হলে বিগত সময়ে বন্ধ থাকা কাজ পুষিয়ে নেয়া যাবে।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ