রবিবার ১৯ মে ২০২৪
Online Edition

শেষ ম্যাচে জয় পেল শ্রীলংকা

শ্রীলংকা-২৮৬/১০ (৫০ ওভার)
বাংলাদেশ-১৮৯/১০ (৪২.৩ ওভার)
শ্রীলংকা ৯৭ রানে জয়ী
রফিকুল ইসলাম মিঞা : ওয়ানডে সিরিজের শেষ ম্যাচ জিতে শ্রীলংকাকে প্রথমবারের মতো হোয়াইটওয়াশ করার সুযোগ নিতে পরলো না বাংলাদেশ। শেষ ম্যাচে বাংলাদেশকে ৯৭ রানে হারিয়ে ঠিকই ঘুড়ে দাঁড়ায় শ্রীলংকা। তবে প্রথম দুই ম্যাচ জিতে আগেই সিরিজ নিজেদের দখলে নেয় বাংলাদেশ। ফলে ওয়ানডে সিরিজে বাংলাদেশ জয় পায় ২-১ ব্যবধানে। শেষ ম্যাচ জিতে শ্রীলংকাকে হোয়াইটওয়াশ করার পাশাপাশি তিন ম্যাচ থেকে পূর্ণ ৩০ পয়েন্ট পেতে পারত। কিন্তু শেষ ম্যাচ জিতে ১০ পয়েন্ট পেল লংকানরা। বাংলাদেশ পেল ২০ পয়েন্ট। গতকাল টস জিতে আগে ব্যাট করে কুশল পেরেরার সেঞ্চুরিতে শ্রীলংকা ৬ উইকেট করে ২৮৬ রান। জয়ের জন্য বাংলাদেশের সামনে টার্গেট ছিল ২৮৭ রান। ব্যাট করতে নেমে বাংলাদেশ ৪২.৩ ওভারে ১৮৯ রানে অলআউট হলে শ্রীলংকা জয় পায় ৯৭ রানে।  জয়ের জন্য বাংলাদেশের সামনে ২৮৭ রানের টার্গেটটা কঠিনই ছিল। তার উপর বাজে ব্যাটিংয়ে শুরু হয় টাইগারদের ইনিংস। ব্যাট করতে নেমে দলীয় ৯ রানের মধ্যে প্রথম দুই উইকেট হারানো বাংলাদেশ ১২৫ রানের মাথায় হারায় ৫ উইকেট। এতে জয়ের পথ কঠিন হয়ে যায় বাংলাদেশের। গতকাল শেষ ম্যাচে লিটন কুমার দাসকে বাইরে রেখে নাইম শেখকে ওপেনিংয়ে পাঠিয়েও লাভ হয়নি বাংলাদেশের। মাত্র ১ রানে করে দলীয় ২ রানের মাথায় বিদায় নেন নাইম। ব্যাট করতে নেমে সফল হতে পারেননি সাকিব আল হাসান। পুল খেলতে গিয়ে ক্যাচ তুলে দিয়েছেন দলীয় ৯ রানের মাথায়। ফলে দলীয় ৯ রানেই বড় ধাক্কা খায় টাইগাররা। এখানেই শেষ নয়। প্রতিরোধ গড়ার চেষ্টা করে ওপেনার তামিম ইকবাল ১৭ রান করে  ফিরলে আরো বিপদে পড়ে বাংলাদেশ। কারণ দলীয়  ২৮ রানে নেই তিন উইকেট। দলের এই বিপদে উইকেট ধরে রাখার চেষ্টা করেছেন মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত ও মুশফিকুর রহিম। তবে আগের দুই ম্যাচে ভালো করা মুশফিকও এই ম্যাচে খুব একটা সফল হতে পারেননি। রান বাড়াতে গিয়ে আউট হয়েছেন ৫৮ বলে ২৮ রান করে। ৭২ বলে ৫২ রান করে পঞ্চম ব্যাটার হিসেবে ফিরে গেছেন মোসাদ্দেকও। ফলে দলীয় ১২৫ রানে বাংলাদেশ হারায় ৫ উইকেট। বিপদে পড়া দলকে টেনে তোলার চেষ্টা করেছেন অভিজ্ঞ মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। তবে তাকে সাপোর্ট দিকে ব্যর্থ তরুণ আফিফ হোসেনও। ১৭ বলে ১৬ রান করে ফিরে গেছেন আফিফ। তার বিদায়ে ব্যাট করতে নেমে রানের খাতা না খুলেই ফিরে গেছেন মেহেদী হাসান মিরাজ আর তাসকিন আহমেদ। ফলে ১৬২ রানে বাংলাদেশ ৮ উইকেট হারিয়ে ম্যাচ থেকে ছিটকে পড়ে। তবে মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ শক্ত হাতে ব্যাট চালিয়ে শরিফুলকে নিয়ে পরাজয়ের ব্যবধানটা কমাতে চেস্টা করেছেন শেষ পর্যন্ত। দলীয় ১৮১ রানে আউট হয়েছেন শরিফুল। আউট হওয়ার আগে করেছেন ৫ বলে ৮ রান। দলীয় ১৮৯ রানে শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে আউট হন ৫৩ রান করা মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। দলকে পরাজয় থেকে বাচাতে না পারলেও ৬৩ বলে ৫৩ রানে ইনিংস খেলে পরাজয়ের ব্যবধান কিছুটা কমান এই অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান। শ্রীলংকার পক্ষে চামিরা একাই নেন ৫ উইকেট। হাসারাঙ্গা ও রমেশ মেন্ডিস নেন দুটি করে উইকেট। এরআগে, টস জিতে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে ৫০ ওভারে ৬ উইকেটে ২৮৬ রান করে শ্রীলংকা। দলের পক্ষে অধিনায়ক কুশল পেরেরা সেঞ্চুরিসহ ১২০ রান করেন। দানুশকা গুনাতিলকাকে নিয়ে প্রথম ওভার থেকেই মারমুখী মেজাজে  খেলতে থাকেন পেরেরা। পাওয়ার-প্লেতে ৭৭ রান তুলে ফেলেন তারা। বোলারদের সুযোগ না দিয়ে দু’জনই সমান তালে রান তুলতে থাকেন।  তবে ১২তম ওভারের দ্বিতীয় বলে গুনাতিলকার উইকেট উপড়ে ফেলেন তাসকিন। ফলে দলীয় ৮২ রানে প্রথম উইকেট হারায় শ্রীলংকা। ৩৩ বলে ৩৯ রান করেন গুনাতিলকা। একই ওভারের শেষ বলে আবারো শ্রীলংকাকে ধাক্কা দেন তাসকিন। তিন নম্বরে খেলতে নামা পাথুম নিশাংকাকে রানের খাতা খোলার আগে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিতে বাধ্য করেন তাসকিন। নিজের দ্বিতীয় ওভারের দুই উইকেট নিয়ে বিধ্বংসী হয়ে ওঠেন তাসকিন। তবে পেরেরা ও কুশল মেন্ডিসের ব্যাটিং দৃঢ়তায় ঘুঁড়ে দাঁড়ায় শ্রীলংকা। তৃতীয় উইকেটে ৮০ বলে ৬৯ রানের জুটি গড়েন তারা। অবশেষে সেই তাসকিনই ২২ রান করা মেন্ডিসকে শিকার করেন। ১৫১ রানে তৃতীয় উইকেটের পতন হলেও, অন্যপ্রান্তে দলের চাকা সচল রেখেছিলেন পেরেরা। সাকিবের বলে ৬৬ ও ৭৯ রানে যথাক্রমে মোস্তাফিজ-আফিফের হাতে দু’বার জীবন নিয়ে সেঞ্চুরির দোড় গোড়ায় পৌঁছে যান পেরেরা। এরপর ৯৯ রানে আবারো জীবন পান এই অধিনায়ক। এবার বোলার ছিলেন মোস্তাফিজুর, ফিল্ডার মাহমুুদুল্লাহ। তিনবার জীবন নিয়ে ৯৯ বলে ১০৪ ম্যাচের ওয়ানডে ক্যারিয়ারে ষষ্ঠবারের মত সেঞ্চুরির স্বাদ নেন পেরেরা। তিন অংকে পা দিয়েও নিজের ইনিংসটি বড় করছিলেন পেরেরা। তবে পেরেরাকে ১২০ রানে থামিয়ে দেন বাঁ-হাতি পেসার শরিফুল ইসলাম। ১২২ বলে ১১টি চার ও ১টি ছক্কায় ১২০ রান করেন পেরেরা। দলীয় ২১৬ রানে আউট হন তিনি। পেরেরার আউটের পর শ্রীলংকাকে বড় স্কোর এনে দেয়ার দায়িত্ব ছিলো লোয়ার-অর্ডার ব্যাটসম্যানদের। সিরিজের প্রথমবার খেলতে নামা নিরোশান ডিকবেলা ৭ রান করে রান আউট হন। আর হাসারাঙ্গা ডি সিলভা ১৮ রান করে তাসকিনের চতুর্থ শিকার হন। তবে ধনঞ্জয়া ডি সিলভার ৭০ বলে ৪টি চারে অপরাজিত ৫৫ ও রমেশ মেন্ডিসের অপরাজিত ৮ রানে ৬ উইকেটে ২৮৬ রানের বড় সংগ্রহ পায় শ্রীলংকা।  তাসকিন নেন ৪ উইকেট। ফিল্ডারদের ভুলে উইকেট  নিতে পারেননি সাকিব ও মিরাজ।
ম্যান অব দ্যা ম্যাচ : দুস্মান্ত চামারা।
ম্যান অব দ্যা সিরিজ : মুশফিকুর রহিম।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ