মঙ্গলবার ২১ মে ২০২৪
Online Edition

বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে সচেতনতা

বর্তমানে আমাদের দেশ ধীরে ধীরে আধুনিকায়নের দিকে অগ্রসর হলেও কিছু কিছু হীন মন-মানসিকতা থেকে এদেশের মানুষেরা আজও বেরিয়ে আসতে পারে নি। তার মধ্যে একটি হলো বাল্যবিবাহ। আজকাল আধুনিকায়নের যুগে এসেও বাল্যবিবাহের মতো পূর্বযুগীয় হীন মন-মানসিকতার ঘটনা আমাদের দেশে অহরহ ঘটে যাচ্ছে। আমাদের দেশের শহরাঞ্চল থেকে গ্রামগঞ্জে উক্ত ঘটনা বেশি ঘটছে। আর এই ঘটনার জন্যে ব্যাপক অর্থে দায়ী হলো শিক্ষার অভাব এবং দারিদ্রতা। আমাদের দেশের শহরাঞ্চলের মানুষেরা গ্রামের মানুষদের তুলনায় অনেকটাই শিক্ষিত এবং আর্থিকভাবে সচল হওয়ায় শহরাঞ্চলে বাল্যবিবাহ পূর্বের তুলনায় অনেক কমে এসেছে। কিন্তু আজও অন্ধকারে রয়ে গেছে এদেশের গ্রাম-গঞ্জের অসংখ্য অঞ্চল। একদিকে পর্যাপ্ত শিক্ষার অভাবে বাল্যবিবাহের কুফল সম্পর্কে তারা সচেতন নয় অপরদিকে দারিদ্র্যতার জন্যে বেশিরভাগ পিতামাতাই তাদের অপ্রাপ্ত বয়স্ক কন্যা-সন্তানদেরকে বিয়ে দিয়ে দেয়ার মাধ্যমে তাদেরকে ভরনপোষণের দায়ভার থেকে নিজেদেরকে মুক্তি দিচ্ছে। এভাবে দারিদ্র্যতা এবং শিক্ষার অভাবে পিতামাতার হীন মন-মানসিকতার জন্যে পড়াশোনার প্রতি তীব্র ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও অসংখ্য মেয়ে শিকার হচ্ছে বাল্যবিবাহের। আর এমন করেই অবলীলায় ঝরে পরছে এদেশের হাজারো সুপ্ত প্রতিভা। শুধু যে প্রতিভাগুলোই ঝরে যাচ্ছে এমনটা নয়। প্রতিভা ঝরে যাওয়ার সাথে সাথে হুমকির মুখে পরছে তাদের জীবনও। দরিদ্র পিতামাতা কন্যাসন্তানদের ভরনপোষণের দায়ভার থেকে নিজেদেরকে মুক্তি দেওয়ার জন্যে অজান্তেই তাদেরকে ঠেলে দিচ্ছে হুমকির মুখে। অপ্রাপ্ত বয়সে বিবাহের ফলে অধিকাংশ মেয়েরা শারিরীক ও মানসিকভাবে দুর্বল হয়ে পরে।

তাছাড়া বাল্যবিবাহের ফলে অল্প বয়সে গর্ভধারণের মতো ঘটনা আমাদের দেশে অহরহ ঘটে চলেছে। সেই সাথে অপ্রাপ্ত বয়সে গর্ভধারণের জন্যে মা ও শিশু উভয়ই ভুগছে পুষ্টিহীনতায়। এছাড়াও গর্ভধারণ, গর্ভকালীন সময়ে স্বাস্থ্য সচেতনতা এবং সন্তান জন্মদান সম্পর্কিত জ্ঞানের অপ্রতুলতার জন্যে অনেক মা ও শিশুর জীবন পরছে ঝুঁকির মুখে। এখনো আমাদের দেশে প্রতি বছর অসংখ্য মা ও শিশু মারা যাচ্ছে অপ্রাপ্ত বয়সে গর্ভধারণের জন্য। আর এভাবেই সুপ্ত প্রতিভাগুলো ঝরে যাওয়ার সাথে সাথে অকালে নিভে যাচ্ছে অনেক প্রাণও।

এখন সময় এসেছে বাল্যবিবাহের মতো হীন মন-মানসিকতা থেকে বেড়িয়ে আসার। বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে প্রথমেই আমাদের বাড়াতে হবে জনসচেতনতা এবং ঘটাতে হবে শিক্ষার প্রসার, আর কাজ করতে হবে দারিদ্র্যতা বিমোচনে। এভাবে শিক্ষার প্রসার ঘটিয়ে এবং দরিদ্র পিতামাতাকে বাল্যবিবাহের কুফল সম্পর্কে সচেতন করতে পারলে বাল্যবিবাহের সংখ্যা কমিয়ে আনা সম্ভব। আর তার জন্যে আমাদের প্রত্যেককেই নিজেদের জায়গা থেকে সাধ্য মতো চেষ্টা করে যেতে হবে এবং সরকার ও প্রশাসনকেও আরো কঠোরভাবে বাল্যবিবাহের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। তাহলেই হয়তো অকাল পতনের হাত থেকে বেঁচে যাবে হাজারো সম্ভাবনাময় জীবন।

-মো: হাসিবুর হাসান হিমেল,শিক্ষার্থী ঢাকা কলেজ।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ