শিক্ষকরা কি প্রকৃত মর্যাদা পাচ্ছে!
খন্দকার বদিউজ্জামান বুলবুল
জাতি গড়ার কারিগর মহান শিক্ষক। একজন শিক্ষার্থী কখনোই শিক্ষক ব্যতীত প্রকৃত জ্ঞান অর্জন করতে পারে না। শিক্ষকরাই পারেন শিক্ষার্থীদেরকে মানুষের মতো মানুষ হিসেবে গড়ার। মহান শিক্ষকদের হাতেই তৈরি হয় দেশের এক একটি সম্পদ। শিক্ষার্থীদের প্রতি শিক্ষকের দায়িত্ব অনেক। শিক্ষকরাই শিক্ষার্থীদের ভালো রেজাল্ট এ উল্লাস প্রকাশ করে, নিজ সন্তানের মতো দেখে। তাদের অক্লান্ত পরিশ্রমে শিক্ষার্থীরা জাতীয় সম্পদে পরিণত হয়। শিক্ষকদের হাতেই রয়েছে একটি জাতীয় সঠিক শিক্ষার ভার। তারা শিক্ষার্থীদের মেধা বিকাশে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। জাতিগড়ার কারিগর মহান শিক্ষকদের কি আমরা তাদের প্রাপ্য সম্মান/মর্যাদা টুকু দিতে পারছি!
আজ যারা লেখক, পাঠক, সাংবাদিক, মন্ত্রী, পুলিশ বা যেসব ব্যক্তি শিক্ষার আলো পেয়েছে,তাদের পেছনেও ছিলো মহান শিক্ষক। শিক্ষকদের অক্লান্তভাবে পরিশ্রমেই আমরা পেয়েছি শিক্ষার আলো। যত বড় কর্মকর্তা ই হোক না কেন শিক্ষকের অবদান ভুলার নয়। সবার পেছনেই ছিলো এক মহা পুরুষ (শিক্ষক)। আজ আমরা যত উপরে উঠছি ততই যেন শিক্ষকের অবদান অস্বীকার করছি/ভুলে যাচ্ছি। সম্মানিত শিক্ষকরা ঘন্টার পর ঘন্টা দাঁড়িয়ে থেকে আমাদের প্রকৃত মানুষ হওয়ার শিক্ষা দিয়েছেন। আমাদের বুঝিয়েছেন অংকের দুর্ভেদ্য সূত্র, বুঝিয়েছে ইংরেজির হরেকরকম রুলস আমাদের প্রদান করেছেন ধর্মীয় জ্ঞান, তারা আমাদের শিখিয়েছেন নিউটনের সূত্র, তারা আমাদের বড় হওয়ার অনুপ্রেরণা যুগিয়েছেন।
এসব শিক্ষদেরকেই আজ নিচু হয়ে থাকতে হয়। বর্তমানে শিক্ষার্থীদের মধ্যে অধঃপতন পরিলক্ষিত। দিনদিন তারা রূঢ় স্বভাবের হচ্ছে। তারা যেনো শিক্ষককে তো সম্মান দিতেই যানে না। যত দিন যাচ্ছে শিক্ষার্থীদের মধ্যে আত্ম-অহংকার বোধ বৃদ্ধি পাচ্ছে। তারা শিক্ষককে শিক্ষক হিসেবে মানতে নারাজ।
এক সময় অনেক শিক্ষার্থী জ্ঞান, মান, প্রভাব, প্রতিপত্তি, অর্থ ইত্যাদি বিষয়ে শিক্ষকদের থেকে এগিয়ে যায় তখন তাদের আত্ম-অহংকারের সিমা থাকে না তখন তারা শিক্ষককে আরও গুনতে চায় না। আমি এমন শিক্ষার্থী দেখেছি যে কিনা শিক্ষকের গায়ে হাত তুলতে দ্বিধা বোধ করিনি। কত ছাত্ররই যে শিক্ষককে ক্লাসে হুমকি দিয়েছে। আর কতই যে স্যারকে অপমান অপদস্ত করার জন্য ছেলেপুলে নিয়ে রাস্তায় অপেক্ষা করেছে তার তালিকা নেহাত কম নয়। আজ ছাত্রের হাতে শিক্ষক রক্তাক্ত হচ্ছে। এটা জাতীর জন্য অপমানের। আজ শিক্ষকরা বড়ই অসহায় তারা প্রাপ্য সম্মান তো পাচ্ছেই না বরং তারা অপমানিত, অপদস্ত হচ্ছে। যা এক কলঙ্ক অধ্যায়ের জন্ম দিয়েছে। অনেক শিক্ষকই প্রাণ হারিয়েছে ছাত্রের দ্বারা যা গুগল সার্চ করলে হিসেব মিলে।
যা কালো কালিতে, পত্রিকায় প্রকাশ হচ্ছে নিয়মিতই।
দিনশেষে, আমরা দেখতে পাই ছাত্রত্বের ট্যাগ লাগিয়ে যারা শিক্ষকদের সাথে বিবেক বর্জিত আচরণ করছে, সমাজকে বিষিয়ে তুলছে তারা হারিয়ে যায়, চূড়ান্তভাবে ব্যর্থ হয়। সফল তো তারাই হয় যারা পেলো শিক্ষকদের দোয়া, যারা পেলো মহান শিক্ষকদের ভালোবাসা।
কর্তৃপক্ষের কাছে আর্জি যেনো শিক্ষকদের বিভিন্ন সুযোগ সুবিধার পাশাপাশি নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়। শিক্ষকের প্রাপ্য সম্মান যেমন দিতে হবে তেমনি তাদের উপর অত্যাচার, লাঞ্ছনা, অপমান, অপদস্তকারীদের কঠিন শাস্তির আওতায় আনতে হবে। যেনো জাতির মহান কারিগরদের উপর কেউ আঙুল তুলতে না পারে।