শনিবার ১৮ মে ২০২৪
Online Edition

আমার গানের পাখি

সুহৃদ আকবর : অনেকদিন পর গ্রামে গেলাম। গ্রামে গেলে আমার মন ভাল হলে যায়। শহুরে জীবন এত বেশি সয়া হয় না। না পারতে শহরে থাকি। সকালে চা-নাস্তা খাওয়ার জন্য চাচাতো ভাই মামুদুল হকের দোকানে যাই। দোকানে বসে চা পান করছিলাম। এমন সময় বাইরে একটা মায়ার ধ্বনি আমার হৃদয় ছুঁয়ে গেল। সে এক ভিন্ন আকর্ষণ। এমনতর সুর শুনে কারো কাছে কি চা পান করতে ভাল লাগবে? লাগার কথা না। আমি আর থাকতে পারলাম না। তাই দোকান থেকে বের হয়ে এদিক সেদিক দেখতে লাগলাম। কোথায় সে সুরের মায়াবিনী। কিছুক্ষণ পর দেখলাম, আকাশমনি গাছের চূড়ার উপরে একটা পাখি উড়ছে আর ডাকছে, উড়ছে আর ডাকছে। এমন মধুর ডাক আমি আগে কখনো শুনতে পাইনি। কত জায়গায় আমি ঘুরলাম রাঙামাটি, রাজশাহী, সিলেট, রংপুর, সবুজের কন্যা দৃষ্টিনন্দন শুভলং। কিন্তু কোথাও এমন ডাক আমি শুনতে পাইনি। দেখিনি এমন মনোলোভা মায়াবিনী পাখি। আমি শুধু আনমনা হয়ে দেখতে লাগলাম। দেখতে দেখতে আমার চক্ষু মোহিত হয়ে গেল। ইচ্ছে করলাম জিজ্ঞেস করি; ও পাখি তোমার নাম কি গো? কিন্তু আবার কি মনে করে করলাম না। যদি না রাগ করে সে চলে যায়। অভিমানে আমার থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়। এমন পাখি আর তাহলে দেখা যাবে না। পাখি নিয়ে গান রচিত হয়েছে, ‘ও পাখি তোর যন্ত্রণা আর তো কানে সয় না' কেন যে এমন গান রচিত হলো কে জানে। গানের রচয়িতা এমন পাখি দেখলে নিশ্চয় এ রকম গান লিখতেন না।

পাখিটি দেখতে অতুলনীয়া। মনোহারিনী, মায়াবিনী, রূপসী, তন্বী যুবতী, ষোড়শী কন্যা যে কোন নামেই তাকে ডাকা যাবে। আমি নাম দিয়েছি অভিমানী। কারণ সে বেশিক্ষণ থাকেনি। চলে ডানা ঝাপটিয়ে। একবারের জন্যও তার এমন প্রেমিক পুরুষকে দেখতে চায়নি। দেখলে একটু হলেও মনে সান্ত্বনা পেতাম। চিন্তার পরিধি কিছুটা কমতো। কিন্তু সে দেখেনি কি আর করা। তার বোধহয় মনে ধরেনি। হয়তো ভুল বুঝতে পেরে আমার কাছে আবার ফিরে আসবে। যেদিন ও আসবে সেদিন আমি কি তাকে দেখতে পাবো। হয়তো এই হলো তার সাথে আমার শেষ দেখা।

রাস্তার দু' ধারে সারি সারি আকাশমনি গাছ। সেনাবাহিনীর মতো কাতারবন্দী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। বাতাসে দুলছে তাদের ডালপালা। একবার এদিক আবার ওদিক হেলছে দুলছে। তার উপরে পাখিটি নিজ মনে তার গান গেয়ে চলছে। পাখিটির গায়ের রং কালো তার উপর হালকা খয়েরী ভাব রয়েছে। তার লেজের উপর একগুচ্ছ হলুদ পুচ্ছ। সচারাচর এমন পাখি দেখা যায় না। আজ হঠাৎ কোথা থেকে সে এলো তাকে দেখে আমি আবেগাপ্লুত হয়ে যাই। তাকে আমি ধরতে চাই, ছুঁতে চাই, স্পর্শ করতে চাই, তার টুকটুকে ঠোঁটে একটা চুমু দিতে চাই। ও পাখি, তুমি কি আমায় ধরা দিবে? সে কোন কথা বলে না। সে আমার কথার কোন উত্তর করে না। অভিমানী বালিকার মতো ভাব ধরে থাকে। মায়াবিনী, মনোহারিনী, চঞ্চলা হরিণী, চপলা তরুণীর মতো শুধু সে এদিক ওদিক ছুটে চলছে। আর আমার বুকের ভেতর ঝড় বয়ে যাচ্ছে অবিরত। তাকে যত দেখছি ততো মায়া বাড়ছে। তার রূপ যেন ঝরে ঝরে পড়ে। পাগলিনী আমাকে পাগল করেছে। আমার চিত্ত হরণ করেছে। আর আমার বুকের ভেতর ঝড় বয়ে যাচ্ছে অবিরত। তাকে যত দেখছি ততো মায়া বাড়ছে। তার রূপ যেন ঝরে ঝরে পড়ে। পাগলিনী আমাকে পাগল করেছে। আমার চিত্ত হরণ করেছে। তার পাগল করা ডাকে আমার চিত্ত চঞ্চল হয়ে উঠে। কিন্তু সে তো নিরন্তর উড়ে চলছে। খোলা আকাশের সাগরে সে যেন তার ভেলা ভাসিয়েছে আপন মনে। যে যত উড়ে চলছে ততই আমার মনের ভেতরকার অনুভূতি জাগ্রত হচ্ছে। আমি যেন হারিয়ে যাই তার ভুবনে।

ইচ্ছে করে পাখি হয়ে নীলাকাশে ঘুরে বেড়াই। পাশে থাকবে আমার প্রিয়া সেও পাখি হবে। আমরা দু'জন পাশাপাশি উড়বো। উড়তে উড়তে দেশ-মহাদেশ সাত সগর তের নদী পাড়ি দেব। ক্লান্ত হলে আমি আমার পাখি প্রিয়াকে ধরবো। তার পাখনায় আমার পালক তার ঠোঁটে আমার ঠোঁট। আমি তখন আমার পাখি প্রিয়াকে নিয়ে উড়তে উড়তে চলে যাব আকাশের গভীর থেকে আরো গভীরে। এভাবে ভাবতে ভাবতে কখন যে পাখিটি আমাকে ফাঁকি দিয়ে চলে গেল আমি তা টেরই পেলাম না।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ